জেলা প্রতিনিধি,লালমনিরহাট।।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ২৫ থেকে৩০ লাখ টাকা টাকা নিয়ে গোপনে অন্য শিক্ষকদের চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার সময়
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে(৪৫)কে পিটিয়ে চাকরি প্রত্যাশী ও তার অভিভাবকরা।
রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন ওই এলাকার ৪/৫ জন বেকার শিক্ষিত যুবককে চাকরির দেয়ার কথা বলে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি চাকুরী না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। ২০২০ সালে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করেন।
পরে গোপনে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অফিস সহকারী কাম, হিসাব রক্ষক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী এই ৫টি পদের জন্য কয়েকদিন আগে আবারও পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৫টি পদের বিপরীতে ৪০ জন প্রার্থী আবেদন করেন।
রোববার বিকেলে এসব পদে গোপনে অন্য পাঁচজনে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার খবরে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের চারিদিকে অবস্থান নিয়ে থাকে। যাতে করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিতে না পারেন। এরই এক পর্যায়ে বিকেলে প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে (৪৫) আছরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের যাওয়ার সময় এলাকাবাসী ও অন্য চাকরির প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া চাকুরির জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চান। তাৎক্ষণিক প্রধান শিক্ষক টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই প্রধান শিক্ষকের
শরীরের পাঞ্জাবি টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেলেন চাকরির প্রত্যাশী ও অভিভাবকরা। এরপর উত্তেজিত স্থানী নারীরা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করতে থাকেন।
ওই বিদ্যালয়ে উত্তেজিত পরিস্থিতি দেখে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাড মতিয়ার রহমান থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গোপনে তাদের মনমতো ৫ জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিয়ে দেন এবং বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
এর আগে নিয়োগ পরীক্ষা গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন পরীক্ষা স্থহিত করা হয়।
এলাকাবাসী আনিসুর রহমান বলেন,গোপনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি এলাকাবাসী জানার পর উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
চাকুরী প্রত্যাশি খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নুর ইসলাম বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধার সন্তান। আমি আমার চাকুরীর জন্য প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যারকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছি। গত ৫ বছর ধরে ঘুরেও তিনি আমাকে চাকরি দেন নি। আজ গোপনে নিয়োগ পক্রিয়া শেষ করেছেন। বিষয়টি জানতে পারলে এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের উপর চড়াও হয় এবং টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। টাকা দিতে না পারায় একটু ধাক্কাধাক্কি হয় বলেও জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ক্লাস চলায় নিয়োগ পরীক্ষাটি বিকেলে নেয়ার কথা ছিল।এ্যাড মতিয়ার রহমান বিদ্যালয় ছুটি হলে তারপর নিয়োগ পরীক্ষা হবে তাই আমি আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে এলাকার সন্ত্রাসী ২০/২৫ জন তার পথরোধ করে আমাকে লাঞ্চিতসহ বেদম মারপিট করে। পরের স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি হাসপাতালে ভর্তি হই।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাড মতিয়ার রহমান বলেন, এ ঘটনার পরপরই উভয়পক্ষকে বসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, এঘটনায় সকল পর্যন্ত কোন অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।